ইমিউনিটির প্রকারভেদ


ইমিউনিটি


 ১. নিয়ন্ত্রিত মাধ্যমের উপর ভিত্তি করে : নিয়ন্ত্রিত মাধ্যমের উপর ভিত্তি করে অর্জিত ইমিউনিটিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হচ্ছে-

(ক) কোষ নিয়ন্ত্রিত ইমিউনিটি (Cell mediated or Cellular Immunity)


(খ) অ্যান্টিবডি নিয়ন্ত্রিত বা রসনির্ভর ইমিউনিটি (Antibody mediated or Humoral immunity)

(গ) ইন্টারফেরন ইমিউনিটি (Interferon Immunity)


(ক) কোষ নিয়ন্ত্রিত ইমিউনিটি (Cell mediated or Cellular immunity): এ ধরনের ইমিউনিটির ক্ষেত্রে দেহে কিছু কোষ তৈরি হয় যেগুলো অন্যান্য পোষক কোষের পৃষ্ঠে অনুপ্রবেশকারী অ্যান্টিজেনের সাথে ক্রিয়া করে। এ কোষগুলো ভাইরাস আক্রান্ত পোষক কোষকে মেরে ফেলতে পারে। এ কোষগুলো এদের পৃষ্ঠে ভাইরাসের প্রোটিন ধারণ করে। এভাবে নতুন সৃষ্ট কোষগুলো ভাইরাস সমলিপন করার পূর্বেই আক্রমণকারী কোষগুলোকে তাড়িয়ে দেয়। অন্যান্য ক্ষেত্রে নতুন সৃঃ কোষসমূহ এক ধরনের রাসায়নিক সংকেত নিঃসরণ করে যা ম্যাক্রোফেজকে সক্রিয় করে আক্রমণকারী কোষকে ধ্বংস করে দেয়। এভাবে নতুন সৃষ্ট কোষ দ্বারা ইমিউনিটি নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিকে কোষ নিয়ন্ত্রিত ইমিউনিটি (Cellular Immunity) বলা হয়। T- লিম্ফোমাইট হচ্ছে এ ধরনের কোষ।


(খ) অ্যান্টিবডি নিয়ন্ত্রিত ইমিউনিটি (Antibody mediated or Humoral immunity): এ ধরনের ইমিউনিটিতে অ্যান্টিবডি নামক এক ধরনের প্রোটিন তৈরি হয় যাদেরকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন (Immunoglobulin, Ig) বলা হয়। অ্যান্টিবডিগুলো রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয় এবং দেহে অনুপ্রবেশকারী ক্ষতিকর অণুজীব বা রাসায়নিক পদার্থের সাথে আবদ্ধ করে তাদেরকে ভেঙে নষ্ট করে দেয়। অ্যান্টিবডির সাথে আবদ্ধ হয়ে (Antitoxin) ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার বিষাক্ত পদার্থেকে (Toxin, যেমন- টিটেনাস বা বটুলিজম টক্সিন) কাঙ্খিত কোষের গ্রাহকের সাথে যুক্ত হতে না দিয়ে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। প্রিসিপিটিন (Precipitin) জাতীয় অ্যান্টিবডি অ্যান্টিজেন অণুসমূহকে জমাট বাঁধিয়ে দেয়। এভাবে দেহে কোনো অ্যান্টিজেন প্রবেশ করলে তার বিপরীতে অ্যান্টিবডি তৈরী হয়ে দেহের উপযুক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা বজায় রাখে।


(গ) ইন্টারফেরন ইমিউনিটি (Interferon Immunity): দেহে ইন্টারফেরন অ্যান্টিভাইরাস প্রোটিন (AVP) তৈরি হয় যা দ্বারা ভাইরাসের প্রোটিন সংশ্লেষণ ও নিউক্লিক এসিড সৃষ্টিতে বাধা দিয়ে কোষ বিভাজন বন্ধ হয়ে যায়। ভাইরাসজনিত অসুখ, চোখের অসুখ, হেপাটাইসিস, বৃক্কের অসুখ, ফুসফুস ও স্তনের ক্যান্সার ইত্যাদি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।


২। সক্রিয়তার উপর নির্ভর করে সক্রিয়তার উপর নির্ভর করে অর্জিত ইমিউনিটিকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হচ্ছে-


(ক) প্রত্যক্ষ বা সক্রিয় ইমিউনিটি (Active Immunity)


(খ) পরোক্ষ ইমিউনিটি (Passive Immunity)


(ক) প্রত্যক্ষ বা সক্রিয় ইমিউনিটি (Active immunity): দেহে অণুজীব, তথা অ্যান্টিজেন প্রবেশ করলে অ্যান্টিবডি ও ১- লিম্ফোমাইট তৈরি হয়। এই অ্যান্টিবডি ও - লিম্ফোমাইট দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি করে। সক্রিয় ইমিউনিটির সুবিধা হলো এটি অনেক দিন দেহে সক্রিয় থাকে। আর এর অসুবিধা হলো ধীরে ধীরে শুরু হয়।


(খ) পরোক্ষ ইমিউনিটি (Passive immunity): স্তন্যপায়ী প্রাণীর বৃদ্ধির সাথে সাথে কিছু সংখ্যক অ্যান্টিবডি মায়ের শরীর থেকে প্লাসেন্টা হয়ে ভ্রূণে কিংবা জন্মের পর দুধের মাধ্যম শিশুর শরীয়ে গমন করে। এ ধরনের অ্যান্টিবডি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ইমিউনিটিকে পরোক্ষ ইমিউনিটি (Passive immurity) বলা হয়। এটা জন্মের পর যে কোনো হারে স্বল্প সময়ের জন্য হয়। এ ধরনের একটি অ্যান্টিবডি হলো IgA।

Leave a Comment